Friday, 21 May 2021

শীর্ষ - ১

একদম টাটকা টাটকা রান্না করে ফেলবো?
না কি বেশ কিছুক্ষণ ম্যারিনেট করবো,
যাতে পুরো ভেতর অবধি যায়?
তোর কি মনে হয়?

তোকে ফোন করে এই কথা তো জিজ্ঞেস করা যাবে না।

এই এখন,
যখন একটা গনগনে শূন্যতা,
আমার ভিতরে আম্ফান এর মত পাক দিয়ে দিয়ে,
পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে আমার অভ্যন্তর,
তখনই কি লিখে ফেলবো
তোর সম্বন্ধে আমার স্মৃতিচারণা, আমার আর্তনাদ?

নাকি এই অসহ্য যন্ত্রণার পক্ষাঘাতে,
জারিয়ে ফেলবো নিজেকে আরো কয়েকদিন,
আরও কয়েক মাস?

যাতে স্মৃতি-বিস্মৃতির তীব্র মিশ্রনে,
ফুটে ওঠে তোর প্রতি আমার ভালোবাসার সব স্বাদ গন্ধ।

দেখ, স্মৃতি কোনদিনই আমার ভালো বান্ধবী ছিল না,
যেমন ও তোর আর সুজনের ।
আমার সবকিছুই ভাসাভাসা, অগোছালো, অসংলগ্ন।
আর গুছিয়ে ওঠার অধ্যবসায় তো আমার হলোনা!

স্পেস টাইম কন্টিনিউয়াম ভেদ করে
টুকরো টুকরো ছবি - অতীতের;
তুই ক্লাস সেভেনে এলি আমাদের হোস্টেলে।
না, তুই আমার রুমমেট ছিলি না কোনো কালে -
আমার স্মৃতি বিভ্রম হয়েছিল।

কিন্তু তার পরের ২-৩ বছরের মধ্যে,
তোর সাথে আমি জড়িয়ে পড়লাম,
প্রেমে পড়ে গেলাম -
তোর বড়ো বড়ো চোখ,
তোর আঙ্গুল তুলে, ঘাড়টা ঈষৎ বাঁকিয়ে, কথা বলা,
তোর ছবি আঁকা,
তোর এস্থেটিক্স এর। 

জোর করে ছিনিয়ে নিলাম পৈতের নেমন্তন্ন -
নরেন্দ্রপুর এর একমাত্র প্রতিনিধি। 

HMT র হাতঘড়ি উপহার নিয়ে,
পুরো শহর টপকে,
পৌঁছে গেলাম
৬ নম্বর (৬ নম্বরই তো?) হরি ঘোষ স্ট্রীট।
তুই দন্ডীঘর থেকে বেরিয়ে
আমার সাথে গল্প করলি,
দেখালি তোদের সাবেকি, শরীকী বাড়ি,
তোর ঘর, তোদের ছাত।
তোর ঠাকুমা জানলেন,
আমি ব্রাহ্মণ সন্তান সুবীর মুখার্জি।
তোর মা আমাকে আসনে বসিয়ে
যত্নে খাওয়ালেন পৈতের খাওয়া।
তখনো আমি আর তুই বোধ হয় ফুডি হই নি -
তাই মনে নেই কি ঘটী বিশেষত্ব খেয়েছিলাম সেদিন।
কিন্তু আপলুত হয়েছিলাম এই ভেবে যে,
তোর পৈতেতে আমি নিমন্ত্রিত।

পৃথিবী-র রাজনীতিতে, উত্তর দক্ষিণের
চিরকাল চাপান উতর।
আমাদের, মোবাইল ছাড়া, বাসে চড়া,
কলকাতা-র ভুগোলেও বেহালা আর দর্জিপাড়ার মাঝে
এক অপার সমুদ্র। 

তোর উত্তর, গ্রে স্ট্রিট, স্কটিশ চার্চ, জয়পুরিয়া আর
আমার দক্ষিণ, আরো দক্ষিণ, ঠাকুরপুকুর, যাদবপুর
ক্রমশ সরে গেলো দূরে।
তুই বামপন্থী রাজনীতি আর নাটক করলি
তোর উচ্ছল উৎসাহে, আর কুড়িয়ে ফেললি
অনেক ফ্যান, অনেক নারীর হৃদয়। 
আমিও দুটোই করলাম -
প্রথমটা প্রতিবাদী insider এবং পরে "বিশ্বাঘাতক" হয়ে ,
আর দ্বিতীয়টাতে আমি মঞ্চে কম,
পিছনে আর মননেই বেশি।
হৃদয়হরণ হলো না ঠিকই, কিন্তু
পেলাম হৃদয়ভঙ্গের অবিস্মরণীয় অমূল্য প্রাইজ।

আমার গল্পটা তুই জানলি না,
তোরটা আমি অনেক পরে আন্দাজ করলাম -
আমাদের সবার মনের লেখকটাই যে জুড়ে জুড়ে গল্প বানায়। 

গৌতম দা'র তারাদের মতো, আমাদের মধ্যেও,
এসে গেলো প্রায় অনতিক্রান্ত আলোকবর্ষ।
সাংবাদিকতা, খবরে কাগজ, টিভি, আর কোলন, জার্মানি। আর,
চাকরি, এমবিএ, টাটানগর, চাকরি, বোম্বে, মুম্বাই।
এর মাঝে তোর প্রেম, বিয়ে।
আর আমার বিয়ে, প্রেম।

তোর ঢেউ এপারে নেই, আমারটা পৌঁছয় নি তোর তীরে। 

জুকারবার্গের দুনিয়া থেকে আমার পালানো
২০১৫-র নভেম্বরে।
মুছে ফেলেছিলাম সে সব -
তাই মনে করতে পারছিলাম না,
সেখানেই কি আবার তোর সাথে আমার দেখা।
আমার দস্তাবেজে তোর সবচেয়ে পুরোনো
ই-চিঠি চৌঠা মে, ২০০৯।
শুধু মোবাইল নম্বরটা পাঠিয়েছিলি। 

তারপরে জমে থাকা হিমবাহ থেকে
ধীরে ধীরে স্রোতস্বীনি হয়ে ওঠা আমাদের
কত কথা হতো -
ফেসবুকে বেশি - কখনো বা ফোনে 
ক্যামেরা, লেন্স, চাকরি, চাকরি ছাড়া - তোর আর আমার,
ওয়াইন, রান্না, ভ্রমণ, রাজনীতি, বই লেখা।
"শীর্ষ, তোর zoom টা কি fixed aperture?"
"নাগু, তোর অনেক পয়সা, তুই ওই লেন্সটা কেন আর
আমাকে ধার দে"
"চল একটা ভালো প্রাইম লেন্স কিনি"
"নাগু, চাকরিটা ছেড়ে দিলাম"
  - "এবার কি করবি?"
"বই লিখবো ভাবছি"
"শীর্ষ, চাকরিটা  ছেড়ে দিলাম"
  - "কনসাল্টেন্সি কর তাহলে"

২৩ অক্টোবর, ২০১৪ -
দেখা হলো সপরিবারে
ইটালিয়ান রেস্তোরাঁ সেরাফিনাতে।
প্রথম দর্শনেই আমাদের ভালো লেগে গেলো
নন্দিনী আর রায়নাকে। ভীষণ ভালো।
তোদের সবার সপ্রতিভতা,
তোদের সবার 'তুই',
তোদের উদার মনস্কতা,
প্রসারিত world view, এবং,
ছোট্ট নিটোল ভালোবাসার
সংসার।

যেন ঠিক আমাদের প্রতিফলন।
আমি ভরে উঠলাম তোকে আবার ফিরে পেয়ে।

১৫-১৭ আমার জীবনে অনেক ঝড়
উড়ে এসে পড়লাম আবার কলকাতায়। 

বাবা মা চলে যাবার পর,
যখন বুঝলাম আমি ফিরে সেখানেই,
যেখান থেকে শুরু করেছিলাম,
সেই তখন থেকেই, তোর সাথে আবার জড়িয়ে পড়া। 


"এই শীর্ষ, ভালো পোর্ক কোথায় পাবো রে?"
"শীর্ষ, ভালো বর্দু/ বোরবোন পেয়েছি"
"শীর্ষ, অমুক লোকটা কি গান্ডু ?"
"শীর্ষ, ট্যাংরার জেসি ইউং takeaway টা অসাধারণ!
    সামনের রবিবারে চলে আয় !"
বা
"নাগু, তুই চিয়াং মাইতে যাচ্ছিস?
    আমি যেখানে ছিলাম সেখানে থাকিস"
"নাগু, ডিজিটাল মিডিয়ার সম্বন্ধে তোর কি ধারণা?"
"নাগু, চল একটু বসি"
(আমরা অবশ্য বসার চেয়ে "চল বসি" বেশি বলেছি,
তবে বসেওছি কম না )

আর স্কুলের হোয়াটস্যাপ গ্রূপ তো আমাদের
পার্শ্বসংলাপ-এর অফুরন্ত খোরাক।
কখনো তুই আমাকে শান্ত করছিস,
কখনো তুই আমাকে উস্কানোর জন্য উসকাচ্ছিস।
আর কখনো ফোনে তোর সেই অবিস্মরণীয়
অট্টহাস্য আর খিল্লি হাসির অদ্ভুত ঢ্যামনা বর্ণশঙ্কর !

আমরা সেলফি কেন তুলি না রে, শীর্ষ?

৩০শে মার্চ তুই লিখলি
"চল একটা বিজনেস লাঞ্চ করি"
তারপরে দু দিন ধরে জল্পনা
কোথায় যাবো, কি খাবো।
অবশেষে তোর পাড়াতেই আমি ঠিক করলাম।
এপ্রিল ফুলের দিন
তুই গাড়িতে ওঠার আগে একটা সিগারেট খেলি।
আবার খাবার পরে একটা।
খিস্তি করলাম, তুই দাঁত কেলালি, বললি
"কমিয়ে দেব।"
আমরা ভিতরে খাবারের ছবি তুললাম,
কন্যাসমা নারীদের দিকে
আড়চোখে সোজা চোখে তাকালাম,
বাইরে এসে আমি ক্যাফেটা-র ছবি তুললাম,
তুই সিগারেট খেলি আর আমরা
আরো দুই  ধূমপানরতা ইউরোপিয়ান তরুণীকে মাপলাম। 

আমরা সেলফি কেন তুলি না বল তো?

তোর বাড়ির টেরেস,
আমার বাড়ির বারান্দা,
তোর বারবিকিউ, আমার স্প্যাগেটি বোলোনিজ
এতো গল্প, এতো খাবার, এতো পানীয়, আর
আর 
আর
তোর এতো সিগারেট!!

আমরা সেলফি কেন তুলি না বল তো ?!


এখন কি হবে?
তোর আর আমার বাংলা পডকাস্টটা
হবে না
তোর আর আমার ছবি তোলার ট্রিপটা
হবে না
তোর আর আমার বিজনেস লাঞ্চ
হবে না
তোর আর আমার বোম্বে গিয়ে মাহিন্দ্রা ব্লুজ দেখা
হবে না 
অন্য সব বন্ধুদের সরিয়ে দিয়ে
   তোর এক নম্বর বন্ধু হয়ে ওঠা 
হবে না 

এখন কি হবে?


মনের ছবিগুলো যদি আবছা হয়ে যায়
তাহলে কি হবে?
এতদিনের ব্যবধানে তোকে পেয়ে
যে অবলম্বন তৈরী করেছিলাম, তার
কি হবে?
এই শহরে এতো কথা বলার
তুই যে ছিলি আমার প্রায়, প্রায় একমাত্র সাথী
তার কি হবে?

এই যে, তুই,
  যার এতো কিছু করার ছিল, 
  যে এতো কিছু করছিলো, 
  যে হালকা চলে চলতো আর রেখে যেত গভীর দাগ,
সে নেই,
আর আমি রয়ে গেলাম,
এই যে অপরাধবোধ, তার
কি হবে ?

যদি ছবিগুলো আবছা হয়ে যায় তাহলে কি হবে, শীর্ষ ?
যদি আমি তোকে ভুলতে না পারি, তাহলে কি হবে, শীর্ষ?

যদি আমি আর এই লেখাটা লিখে না উঠতে পারি,
যদি আমি এই লেখাটা আর কোনোদিনই শেষ না করতে পারি,

তাহলে কি হবে, শীর্ষ?

কাকে জিজ্ঞেস করবো?

ফোন এর ওপারে তো তুই নেই আর। 








Thursday, 21 June 2018

This morning


This morning, I am sad
My life will not fall into
   one of these nice looking designs
A tune hums itself in my head
An old smell lingers in my nostrils for a moment
I seek refuge in the
   unreal sweetness of black & white films

This morning, it all seems meaningless
On other mornings I don’t care

Saturday, 15 November 2014

Dusk at Shivaji Park

When I come and sit or stand here, in front of you, a deity, having improbable and superhuman features, a statue which blends the affection of a mother, the sensuality of a lover and the darkness of a wizard, do I really come to pay you obeisance, expecting that there is somebody on the other side, who may, if pleased, will solve my problems, will ease my troubles, will unwrinkle the path in front of me? Perhaps. Because sometimes despondency sends us to depths of irrationality. But most of the time I come to you, because of the silence around you. Because of the gentleness of the air in your presence. The gentleness that is the decimation of all egos, because when we genuflect in front of you, when we stand with our hands folded in front of your tongue-out visage, we submit to the truth that we aren't in control. Our illusion of control evaporates at your gate. In that atmosphere, a lot of weight suddenly lifts off my shoulders. And I can become a bit of myself and talk; to myself. I sit, away from you, in my shoes, looking at people, at the deepening blue of the evening sky through the trees, the empty cricket nets, at droves of runners, walkers, joggers, talkers surrounding this brownish green patch of urban open space. I sit there and watch as silence and noise battle within. Occasionally it's the silence that triumphs. I sit there and watch. In my thoughts there may be a prayer, may be a puzzle that needs to be solved. But as I sit and watch, I feel it's me to whom the prayer is and it's me who has to solve the puzzle. And then slowly I realize that like you, even I don't exist. This sweet ephemerality, like the memory of dusks of my childhood, like the sounds of conch in each household and the melancholy of the hour captured in the footsteps of the children returning home, becomes the only reality. It's time to go home.